Haidrophobiya rabies or what? Dog bites can you do?

জলাতঙ্ক বা হাইড্রোফোবিয়া মূলত একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ। এ রোগকে হাইড্রোফোবিয়া না বলে র‌্যাবিস’ও (Rabies) বলা হয়। র‌্যাবিস শব্দটি একটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ পাগলামী করা। সাধারণত কুকুর, বিড়াল, বানর, চিকা, শেয়াল, বেজি ইত্যাদি প্রাণী জলাতঙ্কের বাহক। ভাইরাসজনিত র‌্যাবিস জীবাণু দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হলে যে রোগ-লক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে জলাতঙ্ক বলা হয়। মূলত জলাতঙ্ক আক্রান্ত পশু বা রোগীর আচরণ থেকেই এই নামকরণের সূত্রপাত। এ রোগের প্রধান লক্ষণ জল দেখলেই ভয় পাওয়া, জল খাওয়া বা পান করার সময় খাদ্য নালীর উর্ধভাগের মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা ইত্যাদি।

জলাতঙ্ক একবার হলে রোগীকে বাঁচানো একটু কঠিন বা অনেক ক্ষেত্রে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তবে বর্তমানে এ রোগের উন্নত চিকিৎসা আছে। কুকুরে কামড়ানোর সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ মত ভ্যাকসিন নেয়া শুরু করলে ভয়ের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। সাধারনত কুকুর, বিড়াল, শেয়াল, বানর, ইঁদুর, বেজি ইত্যাদি প্রাণী বিশেষ করে কুকুর, র‌্যাবিস জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং মানুষকে কামড়ালে এ রোগ হয়। এসব প্রাণীর মুখের লালায় র‌্যাবিস ভাইরাস জীবাণু থাকে এবং এ লালা কামড় বা কোন পুরানো ক্ষতের মাধ্যমে বা আঁচড়ের মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে আসলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয়। সব কুকুরে কামড়ালেই কিন্তু জলাতঙ্ক রোগ হয় না। যদি কুকুরটির লালায় র‌্যাবিস জীবাণু না থাকে তাহলে কুকুরের কামড়ে এ রোগ হবে না। মূলত কুকুরের কামড়েই আমাদের দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ জলাতঙ্ক রোগ হয়। জলাতঙ্ক র‌্যাবিস এর অনেকগুলো লক্ষণের একটি। বাতাসভীতিও এ রোগের আরেকটি লক্ষণ।

জলাতঙ্ক আক্রান্ত মানুষের লক্ষণ



Rabies নামক এক প্রকার ভাইরাস জলাতঙ্ক বা হাইড্রোফোবিয়া (Hydrophobia) রোগের জন্য দায়ী। কুকুর কামড়ানোর ১ থেকে ৭ সপ্তাহের মধ্যে জলাতঙ্কের লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে। লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই অর্থাৎ কুকুরে কামড়ালেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে৷ Rabies ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর কোন মানুষকে কামড়ালে, ভাইরাসটি সেই ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করে ও কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণের প্রকাশ ঘটায়। যেমন-

এর প্রধান লক্ষণ হল জল বা কোন তরল দেখে আতঙ্কিত হওয়া, পানি খেতে চায় না, পানি দেখলে ভয় পায়।
কামড়ের জায়গায় ব্যথা ও চিনিচিন করে আবার চুলকানি হতে পারে।
পেটে ব্যথা
স্নান করতে অনীহা ভাব
শরীরের পেশীতে টান লাগা
মুখ থেকে অতিরিক্ত থুতু বের হওয়া।
শ্বাস কষ্ট হওয়া
পানি পিপাসা থাকা
মুখ থেকে লালা পড়ে
মৃদু জ্বর, ঢোক গিলতে অসুবিধা
খিঁচুনি হতে পারে।
শান্ত অবস্থা থেকে হঠাৎ রেগে যাওয়া বা অতিরিক্ত উত্তেজনা
রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এবং প্যারালাইসিস হতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে মৃদু বায়ু প্রবাহেও রোগী ভয় পেতে পারে।
আবোল তাবোল কথা বলা।
অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত মানুষ অন্য আক্রান্ত প্রানির মতো অন্য মানুষকে কামরাতে চাইতে পারে।
কুকুর কামড়ালে কি করবেন?
লক্ষণ প্রকাশ পাবার পর এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই এবং রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনাই বেশি। তবে এই মারাত্মক রোগ সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য। কুকুর বা অন্য কোন প্রাণীর কামড়ের সাথে সাথে ক্ষতস্থান সাবান বা এনটিসেপটিক দ্বারা পরিস্কার করলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যাথাযথ ভেকসিন গ্রহন করলে সহজেই এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

প্রথমেই ক্ষতস্থানটি সাবান, পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণ, ৪০-৭০% অ্যালকোহল, পোভিডিন অথবা আয়োডিন যেকোনো একটি দিয়ে ক্ষতস্থানটিকে ভালো করে ভিজিয়ে পরিস্কার করে নিতে হবে। এতে ক্ষতিকর ভাইরাস ক্ষত স্থানে লেগে থাকলে তা নষ্ট হয়ে যাবে।
তারপর দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইঞ্জেকশান রাবিপুর ০, ৩, ৭, ১৪, ৩০ ও ৯০ তম দিনে মাংসপেশিতে নিতে হবে। আক্রান্ত কুকুর কামড়ানোর পরও টিকা নিলে অনেকটা নিরাপদ অবস্থায় থাকা যায়।
আগে বলা হতো, কোনো কুকুর কামড়ালে সেই কুকুরকে ১০ দিন বেধে রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং ১০ দিনের মধ্যে কুকুরটি যদি মারা না যায়, তাহলে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এখন সে ধারণা সত্য নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে অর্থাৎ বাইরে থেকে আপাত সুস্থ দেখতে কুকুরের মধ্যেও জলাতঙ্কের জীবাণু থাকতে পারে। তাই কুকুরে কামড়ালে দেরি না করে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। সেই সঙ্গে ইমিউনোগ্লোবিওলিন ইনজেকশনও দিতে হবে।
অপরদিকে যারা এসব প্রাণী নিয়ে কাজ করেন তারা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আগেই টিকা দিয়ে রাখতে পারেন।


জলাতঙ্ক প্রতিরোধে করনীয়




পোষা কুকুর বা বিড়ালকে নিয়মিত টিকা দিতে হবে।
বেওয়ারিশ কুকুর মেরে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
যেসব প্রাণীর আঁচড় বা কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হয়, যেমন- কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি প্রাণী থেকে সাবধানে থাকতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চাদের এসব প্রাণী থেকে দূরে রাখতে হবে।
পূর্ব প্রস্ততি হিসেবে কুকুরে না কামড়ালেও আগে থেকে এ টিকা দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ০, ৭, ২১ অথবা ২৮তম দিনে তিন থেকে চারটি টিকা দিতে হবে।
কুকুর কামড়ালে সাথে সাথে ক্ষতস্থান সাবান দিয়ে ভালভাবে ধুতে হবে। এরপর সেখানে পভিডন আয়োডিন দিতে হবে।
কামড়ানোর স্থান কোন কিছু দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না।
জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে এমন কুকুর বা অন্য পশু কামড় বা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে টিকা নেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে ০, ৩, ৭, ১৪ ও ২৮তম দিনে সর্বমোট ৫টি টিকা দিতে হবে।
জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুরের লক্ষণ
কুকুর বা অন্য কোনো প্রাণী কামড়ালে দিশেহারা না হয়ে প্রাণীটিকে ধরে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। দংশিত প্রাণীটিকে হত্যা না করে ১০ দিন বেঁধে রেখে পর্যবেক্ষণ করে যদি নিম্নলিখিত লক্ষনসমূহ প্রকাশ পায় তবে বুঝতে হবে প্রাণীটি ভাইরাসে আক্রান্ত। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। লক্ষনসমূহ নিম্নরুপঃ

আক্রান্ত প্রাণী পাগলের মতো আচরন করে এবং সব কিছু কামড়ানোর প্রবনতা দেখা যায়।
উদ্দেশ্যহীন ভাবে ছোটাছুটি করতে পারে।
খাবার কিংবা জল গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া।
মুখ থেকে অত্যধিক হারে লালা নিঃসৃত হবে।
ঘন ঘন ঘেউ ঘেউ অথবা বিড় বিড় শব্দ করা।
হাপ টেনে শ্বাস নেওয়া।
এক পর্যায়ে গলার মাংস পেশিতে পক্ষাঘাত হওয়ায় আর ঘেউ ঘেউ করতে পারে না।
আবার কিছু ক্ষেত্র আক্রান্ত প্রানীর মধ্যে উত্তেজনা ভাব প্রকাশ না পেয়ে চুপচাপ থাকতে পারে।
কুকুরটি খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কারনে নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং কয়েক দিনের মধ্যে মারা যায়। সাধারণভাবে আক্রান্ত কুকুরটি ১০ দিনের মধ্যে মারা যায়।
পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে করনীয়
যেহেতু জলাতঙ্কে আক্রান্ত হলে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম, তাই সতর্কতা অবলম্বন করা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই একমাত্র পথ। যেমন-

পোষা কুকুরটি গলায় ব্যাল্ট পরিয়ে রাখতে হবে।
রাস্তার বেওয়ারিস কুকুরগুলো মেরে ফেলতে হবে।
পোষা কুকুর-বিড়ালকে চিকিৎসকের মাধ্যমে জলাতঙ্কের টিকা দিতে হবে।
এ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন “রাবিপোর”
কুকুর কামড়ালে এখন আর নাভির চারদিকে ১৪টি ইঞ্জেকশন নিতে হয় না। দেশের সকল জেলাতেই এখন বিনামূল্যে এ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন রাবিপোর পাওয়া যায়। ৫টি ইঞ্জেকশনে এক ডোজ। প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জনের অধীনে একটি করে জলাতঙ্কের টিকাদান কেন্দ্র আছে, যেখান থেকে বিনামূল্যে এ টিকা সংগ্রহ করা যাবে।

সবশেষে
মোটামুটিভাবে বাংলাদেশে জীবজন্তুর কামড়ের ব্যাপকতা প্রতি এক হাজার জনে ১৩ জন। তার মধ্যে ৬ থেকে ১০ বছরের শিশু কিশোরের হারই সর্বাধিক অর্থাৎ ২৭.৬% এবং তারপরে ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সের মানুষের হার ১৬.৩%। অর্থাৎ ১৫ বছরের নিচে শিশু কিশোর ও বয়স্ক মানুষ এ রোগের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, কারন- শিশুরা জীব জন্তু নিয়ে খেলা করে এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা জীব জন্তু প্রতিহত করার ক্ষমতা কম রাখে। আবার আক্রান্ত মানুষের মধ্যে শতকরা ৩৩.৩ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করে, ৬২.৫ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করে না এবং ৩.১ জন ভেকসিন সম্পর্কে জানেই না। দারিদ্রতা এবং অসচেতনতাই বেশিরভাগ মানুষ ভ্যাকসিন না নেয়ার অন্যতম প্রধান কারন। তাই, সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমেই জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করা সম্ভব।

No comments:

Post a Comment